রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৮ শতাংশকে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে হচ্ছে, যা বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ তৈরি করছে।
ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিবুল হাসান তিনবার হলে ওঠার আবেদন করেও জায়গা পাননি। অধ্যাপকের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে শহীদ হবিবুর রহমান হলে জায়গা দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি মেসে থাকছেন, যেখানে মাসিক খরচ প্রায় চার হাজার টাকা। তিনি বলেন, “বাইরে থাকতে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়। রোজ রিকশাভাড়া দিতে হয়। হলে থাকলে খরচ ও চিন্তা দুই–ই কমত।”
অন্যদিকে, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসবির হাসান শাহ মখদুম হলে জায়গা পেয়েছেন। তাঁর বড় ভাই একই হলে থাকায় আসন পাওয়া সহজ হয়েছে। তিনি জানান, “হলে ভাড়া মাত্র ১০০ টাকা। বাইরে থাকলে মাসিক ভাড়া দুই-তিন হাজার টাকা হতো।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হল ও একটি আন্তর্জাতিক ডরমিটরিতে মাত্র ৯,৬৭৩ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। ছেলেদের জন্য ১১টি ও মেয়েদের জন্য ৬টি হল থাকলেও, শিক্ষার্থীর তুলনায় তা অপ্রতুল। ছাত্রী হলগুলোতে ‘গণরুম’ চালু রয়েছে, যেখানে অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এতে পড়াশোনা ও বিশ্রাম—দুই–ই ব্যাহত হয়।
গত ২৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ বেড়েছে ২৩টি, নতুন অনুষদ হয়েছে ৭টি, কিন্তু নতুন হল হয়েছে মাত্র ৩টি। শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০০০ সালে ছিল ২১ হাজার, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজারে।
হল সংকটের কারণে অতীতে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে আসন–বাণিজ্য ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আসন পেতে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হতো। তবে প্রশাসনের দাবি, এখন মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
আবাসন সংকট নিরসনে বর্তমানে দুটি নতুন হল নির্মাণাধীন। শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের কাজ প্রায় শেষ, ডিসেম্বরেই শিক্ষার্থীরা উঠতে পারবেন। শেখ হাসিনা হলের কাজ ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, আগামী জুনে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া আরও পাঁচটি নতুন হল নির্মাণের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে সরকারকে।
রাকসু নির্বাচন সামনে রেখে আবাসন সংকট বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা নতুন হল নির্মাণ, আবাসন ভাতা চালু ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন জানান, আবাসন সংকট সমাধানে প্রশাসন কাজ করছে এবং সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আশাবাদী, রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁদের দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যার সমাধান হবে।
মন্তব্য করুন